৭ বছরের ছোট ছেলের দ্বারা গর্ভবতী হন অর্চনা

মাত্র ১০ সেকেন্ডের একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। এরপর অভিনয় প্রতিভা তাকে বলিউডের প্রথম সারির কুশীলবদের একজন করে তুলেছে। তিনি অর্চনা পুরান সিং। সিনেমায় ডনের গার্লফ্রেন্ড, ভিলেন, আইটেম নম্বর শিল্পী থেকে টেলিভিশনের মেগা ‘লাফটার কুইন’। সব চরিত্রেই নিজের দক্ষতার ছাপ রেখে গেছেন তিনি।

তিনি ১৯৬২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দেরাদুনে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী। দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজে পড়ার সময় তিনি মডেলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। মডেলিং করতে গিয়ে তিনি একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। ‘নিকাহ’ সিনেমাটি ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। ছবির একটি গানের দৃশ্যে তাকে দশ সেকেন্ডের জন্য সেলসগার্লের ভূমিকায় দেখা যায়।

বিজ্ঞাপনে কাজ করতে গিয়ে জালাল আগরের সঙ্গে আলাপ হয় অর্চনার। পরে জালাল আগরের সূত্র ধরে পঙ্কজ পরাশরের সঙ্গে পরিচয় হয়। অর্চনার প্রথম ছবি ‘জলওয়া’-তে নায়ক ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ। কিন্তু এই ছবির পরও ইন্ডাস্ট্রিতে প্রত্যাশিত সুযোগ পাননি অর্চনা। মূলত তাকে বি বা সি গ্রেডের সিনেমায় দেখা গেছে। নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন সাহসী চরিত্রে অভিনয় করলে বড় ব্যানারে করবেন।

অর্চনা তার ক্যারিয়ার শুরু করার আগে তার জীবনে একটি বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন। ভেঙে যায় তার দাম্পত্য জীবন। সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে তিনি পুরুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। পরে যখন পরমিত শেঠি তার জীবনে আসেন, অর্চনা তার প্রস্তাবে হ্যাঁ বলতে অনেক সময় নেন। অর্চনা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হলেও বিয়ে করতে চাননি।

তিনি এবং পারমিত থাকতেন। সে সময় তাদের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা হয়। তা ছাড়া তার আর পারমিতের বয়সের ব্যবধান ছিল সাত বছরের। সেটাও ছিল বলিউড গসিপের অন্যতম আকর্ষণ। পারমিতের বাবা-মা তাদের ছেলের সাথে ডিভোর্স এবং সাত বছরের বড় অর্চনার সাথে রাজি হননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রেমিকের হাত ছাড়েননি পরমিত।

থাকতে থাকতেই ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি পান অর্চনা। অপরদিকে পরমিত চেষ্টা করছে। ১৯৯২ সালে পরমিত টেলিভিশনে একটি বড় কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। সেদিনই তিনি অর্চনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। অর্চনা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। রাতেই দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। পুরোহিতকে ডেকে তাদের বহুতল ছাদে দুই বন্ধুর উপস্থিতিতে বিয়ে করা হয়।

বলিউডে কাজ করার পরেও, অর্চনাকে বোল্ড দৃশ্যের অভিনেত্রী হিসাবে স্টেরিওটাইপ করা হয়েছিল। তিনি এই ছাপ রেখে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অন্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ তার কাছে আসছিল না।

১৯৯৪ সালে, তিনি ‘রাত কি গুনাহ’ ছবিতে শেখর সুমনের বিপরীতে অভিনয় করেন। অর্চনার চরিত্রের নাম ছিল ‘ইন্সপেক্টর রেশমা’। এই বি গ্রেডের ছবিতে অভিনয় করে কয়েক বছর কাটিয়ে অর্চনা পরে আফসোস করেন। এবার ছোট পর্দায় কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে, তিনি ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ ছবিতে কারিশমা কাপুরের সৎ মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিতে তিনি ভিলেনের চরিত্রে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

অর্চনা গর্ভবতী অবস্থায় এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু একবারের জন্যও তা বোঝা যায়নি ছবিতে। বেশ কয়েক বছর অভিনয় করেও বলিউডের প্রথম সারিতে জায়গা পাননি তিনি। 1998 সালে তিনি সেই সুযোগ পান। করণ জোহরের ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এ অভিনয় করেন। এই ছবিতে তিনি একজন প্রলোভনসঙ্কুল শিক্ষিকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, ‘মিস ব্রাগানজা’। তারপর থেকে, তিনি কমিক চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন।
‘মোহাব্বতে’, ‘হে ভাগ্যবান! লাকি ওয়ে!’, ‘মেরে বাপ পেহেলে আপ’, ‘মাস্তি’-এর মতো ছবিতে নতুন চরিত্রে অর্চনার অভিনয় দর্শকরা পছন্দ করেছেন। এই চলচ্চিত্রগুলির কারণে, তিনি ছোট পর্দার বিভিন্ন স্ট্যান্ড-আপ কমেডি শো-এর অংশ হয়ে ওঠেন।

অর্চনা, যিনি অতীতে সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন, ধীরে ধীরে নিজেকে একজন কমেডিয়ান হিসাবেও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এখন তাকে কপিল শর্মার জনপ্রিয় শো ‘কমেডি উইথ কপিল’-এ বিচারকের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। সিনেমার চেয়ে ছোট পর্দায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি পেয়েছেন বলে মনে করেন তিনি। শুধু সিনেমায় অভিনয় করলেই আজ ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যেতেন বলে মনে করেন তিনি।