একজন মা কীভাবে প’তি’তা হয়ে উঠেন (বাস্তব কাহিনী)

কেমন একটা মা- সেদিন সারাদিন বিষণ্ণ আর একা কাটিয়ে সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হয়েছিলাম। টিএসসিতে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে হাঁটতে বের হলাম। অনেকক্ষণ ধরে বাগানে বসে আছি। আমি সম্ভবত আকাশের অসীমতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ আবছা আলোয় দেখলাম একজন মাঝবয়সী মহিলা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি একটু বিস্মিত ছিল। এত রাতে এমন নির্জন জায়গায় এমন আবছা আলোয় কী করছেন মহিলা!

এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো হয়তো তিনি এখান দিয়েই ভ্রমণ করেছেন। চোখ সরিয়ে আবার আকাশে রাখলাম। এমন সময় তিনি এসে আমার সামনে দাঁড়ালেন। আমি হতভম্ব হয়ে সেখানে বসে রইলাম। এই মহিলা কি চান? সে প্রথমে আমাকে সম্বোধন করে বলল, “ভাই তুমি কিছু করবে?” কিছু না বুঝে ওর মুখের দিকে তাকালাম। তিনি প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করলেন। এবার আমি বললাম, দুঃখিত আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কি বলতে চাইছেন?

সে একটু হেসে বলল, তুমি বুঝ না? আমি মাথা নাড়লাম। পরে তিনি আমাকে কী ব্যাখ্যা করেছিলেন তা আমি এখানে লিখতে পারব না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি একজন স্বামী এবং কেন তিনি আমার কাছে এসেছেন। আমি তাকে বললাম দেখুন, আমি এখানে এমন কোন উদ্দেশ্যে বসে আছি না। তাই আপনি যেতে পারেন. এবার তিনি যোগ করলেন, তিনি দেখলেন, আজ কোনো গ্রাহক নেই। আমি জানি

বসতে পারবে? চল এখন আমি একটু রেগে গেলাম। আমি রাগ করে কিছু বলার আগেই শান্ত হলাম, আচ্ছা, আপনি কত টাকা নেন? তিনি আমাকে পরিমাণটি বলেছিলেন। অনেকদিন একাকীত্বে মত্ত হয়ে ওকে বললাম, আচ্ছা আমি এমন কাজ করব না, কিছু সঙ্গ চাই। তবে আমি তোমার সাথে বসে গল্প করবো। আমার সম্পূর্ণ বিস্ময়, তিনি হাসতে বসলেন।

“স্যার প্রতি রাতে আমার কাছে আসতেন বলে বিয়ে করবেন”
বললেন, গল্পটা বলবে? আমি বললাম, তুমি এভাবে এলে কিভাবে? (এই প্রশ্ন করাটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয় স্বামীদের সঙ্গে সবার কথোপকথন এই প্রশ্ন দিয়েই শুরু হয়।) তিনি বললেন, পেটের কারণে আসছি। পেটের দায়ে কেন এই পথ বেছে নিলেন? আপনি অন্য উপায়ে উপার্জন করতে পারেন. আমার স্বামী আমাকে আবার বিয়ে করেছে। তারা এখন কোথায় আছে জানি না।আমি আগে একটা বাসায় কাজ করতাম। ঐ বাসার পুরুষ মানুষটা আমারে অনেকবার নির্যাতন করছে। আমি একবার উনার স্ত্রীর কাছে সব খুইল্যা বলি।

আমি জানি না সে তার স্বামীর সাথে কি করছে, তবে সে সেদিন আমাকে বিদায় জানিয়েছিল। তারপর অন্য বাসায় কাজ করতাম। ওখানকার লোকটা আরও খারাপ। পরে ভাবলাম, যখন তাদের কাছে আমার কাজের চেয়ে আমার শরীরের মূল্য অনেক বেশি, তখন আমার শরীর দিয়ে আয় করা উচিত। এই কথা বলার সময় আবছা আলোয় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সরল চেহারা। গায়ের রং ধূসর।মুখে বাঙালি নারীত্বের প্রবল ছাপ। মুখটা এত মায়াবী যে একবার সেই মুখের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায়। তারপর আরও কিছু বিষয় আছে যা এখানে উল্লেখ না করাই ভালো। চলুন আসল কথোপকথনে এগিয়ে যাই।

আমি বললাম, তোমার কয়টা বাচ্চা আছে? আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম যে তার চোখ চকচক করছে। তিনি বলেন, আমার দুই ছেলে আছে। তারা কোথায় থাকে? তারা তাদের দাদির সাথে বাড়িতে থাকে। তারা কি পড়াশুনা করে? বুঝলাম আগ্রহে তার চোখ উজ্জ্বল। বড় ছেলেকে মাদরাসায় পাঠালাম। পরের বছর দাও। বড় ছেলেকে হাফেজ করুন। প্রার্থনা করুন।

তার শেষ কথা আমার মাথায় বাজতে থাকে, ছেলেকে হাফেজ বানাও, ছেলেকে হাফেজ কর। আপনার রোজগারের টাকা দিয়ে কি আপনার ছেলে পড়াশোনা করে? হ্যাঁ, ঢাকা শহরের থাই খাবার খেয়ে যে টাকা বাঁচাতে পারি তার সবটুকুই আমি মাকে দিয়ে দেই। তিনি আমার ছেলেকে রাত দুইটায় দেখেন। তোমার ছেলেরা তোমার কাছে থাকতে চায় না? হা, এইবার ঢাকায় আসার আগের দিন ছোট ছেলে আমাকে ডাকল, মা। আমগোরে ঢাকা নিয়ে যাও। মাঝে মাঝে আমিও চাই মন্ডা ঢাকার ওগোরে ভালো জায়গায় পড়াশোনা করুক। কিন্তু এটা অনেক টাকার ব্যাপার।

আপনার ছেলেরা হাফেজ হলে কি আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে? হাফেজ ছেলে, এসব আর করো না। তারা কখনই জানবে না তাদের মা কতটা খারাপ। এবার তিনি কেঁদে ফেললেন। আমার চোখও ভিজে গেল। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। তার ছেলেকে কিছু টাকা দিয়ে উঠলাম। ততক্ষণে চাঁদ তার উপস্থিতি বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছে।আমি উপরে যেতেই ভাবছিলাম, বাংলাদেশে এটাই স্বাভাবিক। এখানে কেউ লালসার তাড়নায় বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানাবে। অনেক টাকা সঞ্চয় করে তিনি খালি হাতে কবরে যাবেন। আবার কেউ কেউ স্বামীর টাকায় ছেলেকে লেখাপড়া করার স্বপ্ন দেখবে। বাবা ছেলেকে ছেড়ে চলে গেলেও মা?

About Shariful Islam

Check Also

জানা গেল নোরা ফাতেহির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ! চোখ কপালে নেটিজনদের

বলিউড অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী নোরা ফাতেহি। ‘দিলবর’, ‘কোমারিয়া’, ‘ও সাকি সাকি’, ‘গারমি’সহ অনেক জনপ্রিয় গানে …