কালিয়াকোর বাসস্ট্যান্ডের ফলপট্টিতে পেয়াজুর বিশাল সংগ্রহ। দোকানটি মাসুদের। পুরো নাম মো. মাহফুজুর রহমান মাসুদ খান। তিনি গাজীপুর জেলার বড়ইতলীর বাসিন্দা। পেয়াজু ছাড়াও মাসুদের দোকানে বেগুনি, আলুর চপ এবং সেদ্ধ ছোলাও পাওয়া যায়। সারাদিনই তার দোকানে ভিড় থাকে। গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মাসুদের দোকানে ২০-২৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন।
মাসুদের পেঁয়াজুর স্বাদে মুগ্ধ হয়ে কালিয়াকৈর ছাড়াও গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর এমনকি ঢাকার বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা পেঁয়াজ কিনেছেন।প্রথমে ২ টাকা দরে পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন মাসুদ। বর্তমানে তা ১০ টাকা। জানা যায়, প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকার পেঁয়াজু বিক্রি হয় মাসুদের দোকানে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় সেদিন দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি হয় বলেও জানিয়েছেন দোকানের ম্যানেজার ওমর উদ্দিন।প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন মাসুদ। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়তে থাকে। এখন তারা শুধু কর্মচারীদের মাসে ছয় লাখ টাকা বেতন দিচ্ছেন। পেঁয়াজ বিক্রি করেই কোটিপতি হয়েছেন মাসুদ।
১৯৯২ সালে মাত্র ৩০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ফুটপাতে পেঁয়াজুর ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাসুদ। এই ব্যবসা করেই জমি কিনে নির্মাণ করেছেন পাকা দালান, বিয়ে দিয়েছেন তার ৬ বোনকে।মাসুদের দোকানে পেঁয়াজ খেতে আসা নার্সিং কলেজের ছাত্র শাওন বলেন, “কালিয়াকোরে আমার এক বন্ধুর কাছে এই পেঁয়াজের কথা প্রথম শুনি। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ভিডিও দেখে আগ্রহী হই।
আমি প্রায় ৩০০ কি.মি. লালমনিরহাট থেকে এসেছি। আমি পেঁয়াজ খেতে খুব পছন্দ করি। এটা এতদূর থেকে আসা মূল্যবান হয়েছে. পেঁয়াজের এমন স্বাদ আগে কখনো পাইনি।নার্সিং কলেজের আরেক ছাত্রী ফারজানা বলেন, “ফেসবুকে পেঁয়াজের বিষয়টি দেখে আমি এখানে খেতে এসেছি। খুব ভালো লেগেছে এবং স্বাস্থ্যকর মনে হয়েছে।”
কালিয়াকোড়ের রেমন্ড টেইলার্সের মালিক খুশি বলেন, “উত্তরা দিয়াবাড়িতে আমার এক স্ত্রী থাকেন। তিনি মাঝে মাঝে এখান থেকে পেঁয়াজ কিনে আনেন।মাসুদের দোকানের কারিগর আইয়ুব আলী বলেন, ‘১০ বছর ধরে এই দোকানে পেঁয়াজুসহ নানা ভাজাপোড়া তৈরি করছি। আমার মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা। তবে রমজান মাসে ৪০ হাজার টাকা পাই।
আমাদের পেঁয়াজু স্বাদ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। আমরা নিজেদের বানানো কিছু মসলা ব্যবহার করি, তাই এত বেশি স্বাদ হয়।ওই বিশেষ মাসআলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো বলা যাবে না।আরেক কারিগর দুলাল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পেঁয়াজুসহ নানা খাবার তৈরি করি। প্রতি মাসে নিয়মিত বেতন পাই। আসলে সারা বছরই আমাদের বেচাকেনা ভালো হয়। এজন্য আমরা সবাই খুশি।
দোকানের ম্যানেজার ওমর উদ্দিন বলেন, “আমি ২২ বছর ধরে এই দোকানে কাজ করছি। এই কাজ করে আমি তিনটি মেয়েকে বিয়ে করেছি। আমি একটি তিনতলা বাড়ি তৈরি করেছি। এখান থেকে আমি মাসিক ৪৫,000 টাকা বেতন পাই। বেতন-ভাতাসহ কয়েক মাসে ৫০ হাজার টাকাও পাই।
প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। শুক্রবার ১ লাখ টাকার উপরেও বিক্রি হয়, রমজান মাসে দেড় লাখ টাকার বেশিও বিক্রি হয়। ক্রেতার ভিড়ে মাঝে মাঝে দুপুরে খাবার যেতে পারি না।দোকানের মালিক মাসুদ খান বলেন, “আমি ৩০ বছর আগে ফুটপাতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করি। আমার পানিয়ানুর বিশেষত্ব হল পেঁয়াজের সঙ্গে সামান্য ময়দা, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা ও খাঁটি সয়াবিন তেল যোগ করা।
পুরনো তেলে কখনই পেঁয়াজ ভাজবেন না। আমরা এখানে কোন ভেজাল খাবার পরিবেশন করি না আমরা আমাদের নিজস্ব কিছু মসলা ব্যবহার করি।তিনি আরও বলেন, ‘পেয়াজুর সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় এখন গড়ে ৫০ লাখ টাকা। এক সময় অনেক কষ্ট পেয়েছি কিন্তু হাল ছাড়িনি।
এই ব্যবসার মাধ্যমে আমি আমার বোনদের বিয়ে করেছি, একটি হোটেল তৈরি করেছি, একটি বাড়ি তৈরি করেছি। 25 জন কর্মচারী নিয়মিত কাজ করছেন। এ ছাড়া দৈনিক মজুরিতে কয়েকজন নারী কারিগর রয়েছে। সব মিলিয়ে আমি তাদের মাসে ছয় লাখ টাকা দেই।