প্রথম হিন্দু ও মিশ্র বর্ণের ব্যক্তি ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে একটি হিন্দু-পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করা ৪২ বছর বয়সী ঋষি ছাত্রজীবনে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতেন সাউদাম্পটনে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি রেস্তোরাঁয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেস্তোরাঁয় কাজ করার কথাও উল্লেখ করেছেন ঋষি সুনক। ‘কুটির ব্রাসারী’ নামের রেস্টুরেন্টটির মালিক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের কুটি মিয়া। কুটিস ব্রাসারিতে কাজ করার কথা উল্লেখ করে ঋষি বলেন, রেস্তোরাঁয় কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল। খাবারের অর্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে খাবার পরিবেশন, টেবিল পরিষ্কার করা সব কাজই করতাম। কাজটি সহজ ছিল না।
এ প্রসঙ্গে কুটি মিয়া বলেন, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঋষি সুনক নব্বই দশকের শেষ দিকে কিছু সময় আমার রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। তখন ঋষি কলেজে পড়ত। কলেজের ছুটিতে সপ্তাহে দুই দিন রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবে খণ্ডকালীন কাজ করতেন।
ঋষি গ্র্যাজুয়েশন করেন ২০০৩ সালে। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে তিনি ওই রেস্তোরাঁয় কাজ করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।১৯৮০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা যশবীর সুনাকের জন্ম কেনিয়ায়। তার মা ঊষা সুনাক জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন তাঙ্গানিকায়, যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ।
ঋষির দাদা-দাদি ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং 1960-এর দশকে তাদের সন্তানদের নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। যশবীর সুনক যুক্তরাজ্যে একজন জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) এবং উষা সুনাক ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে ঋষি সুনক সবার বড়
ঋষির দাদা রামদাস সুনাক চাকরির জন্য গুজরানওয়ালা, পাকিস্তান ছেড়ে 1935 সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে চলে আসেন। রামদাস এবং সুহাগের 6 সন্তান (3 ছেলে এবং 3 মেয়ে) রয়েছে। ঋষির বাবা যশবীর সুনাক 1966 সালে ডাক্তারি পড়ার জন্য লিভারপুলে চলে আসেন। চিকিৎসার কারণেই যশবীর সুনাকের পরিচয় হয় ব্রিটিশ রেস্টুরেন্ট কুটি মীরের সাথে। এরপর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
ঋষির বাবা যশবীর সুনককে বন্ধু উল্লেখ করে কুটি মিয়া বলেন, ঋষি তার বাবার (যশবীর) সঙ্গে পরিচয়ের কারণে তার রেস্টুরেন্টে কাজ করতে আসে। ঋষি কাজে খুব মনোযোগী ছিলেন, কুটি মিয়া বলেন, তিনি একজন অসাধারণ ভালো মানুষ। খণ্ডকালীন চাকরি হলেও তিনি তার কাজে খুব সিরিয়াস ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই কাজের প্রতি ঝোঁক ছিল তার।
কুটি মিয়া বলেন, আমি এসব বলতে চাইনি, কিন্তু এখন বলছি, যাতে এখানকার প্রবাসীরা ঋষির জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারে। অভিবাসীরা তাদের সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিতে পারলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে ওঠা সম্ভব। ঋষি সুনাক 2015 সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন।
তিনি থেরেসা মে-এর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 2019 সালে, যখন বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন ঋষিকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।এ বছরের মাঝামাঝি মিথ্যা বলার কেলেঙ্কারিতে পড়ে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর নেতৃত্বের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন ঋষি সুনাক।
কিন্তু তাকে হারিয়ে যিনি দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হন, সেই লিজ ট্রাস মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় থাকার পর গত সপ্তাহে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।এরপরপরই আবারও নেতৃত্বের জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন সুনাক। শেষ পর্যন্ত অন্য কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ না করায় ঋষি সুনাকই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হন।
গত ২৫ অক্টোবর বাকিংহাম প্যালেসে যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঋষি সুনাক। এরপর রাজপ্রাসাদ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস।