লিভারপুলের সুপারস্টার ফুটবলার ছিলেন সাদিও মানে। গত কয়েক মৌসুমে অলরেডদের যত সাফল্য, মানের নাম তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। বর্তমানে বায়ার্ন মিউনিখে খেলা এই সেনেগালিজ ফরোয়ার্ডের অন্য একটা দিকও আছে। তিনি শেকড় ভুলে যাননি। সুযোগ পেলেই ছুটে যান নিজ জন্মভূমিতে। এমনকি নিজের ‘পিছিয়ে পড়া’ গ্রামকে শহরে পরিণত করার কাজও শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
তার ফুটবল ক্যারিয়ারে সাফল্য, খ্যাতি এবং সম্পদ সবই ধরা পড়েছে মানের হাতে। পেয়েছেন অসংখ্য সাফল্য। তবে মাঠের বাইরে তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। তিনি অর্জনগুলোকে শুধু নিজের জন্যই নয়, দেশ ও গ্রামের মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন। তিনি তার আয়ের একটি বড় অংশ তাদের জন্য ব্যয় করেন।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং আফ্রিকান নেশনস কাপ জয়ী এই ফুটবলার তার গ্রামে একটি হাসপাতাল, স্কুল, পোস্ট অফিস এবং পেট্রোল স্টেশন তৈরি করেছেন।বায়ার্নে যোগ দেওয়ার কিছুদিন আগে সেনেগালে গিয়েছিলেন মানে। সেখানে তিনি সাবেক প্রিমিয়ার লিগ তারকা পাপিস সিসে এবং এল-হাজী দিউফের সঙ্গে এক চ্যারিটি ম্যাচে অংশ নেন।
সেখান থেকে একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে যান তিনি। এই হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য ২০২১ সালে ৪ লাখ ৫৫ হাজার পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি ৯ লাখ টাকা দিয়েছেন মানে। হাসপাতালটিতে আশেপাশের প্রায় ৩৪ গ্রামের মানুষ চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
আড়াই লাখ পাউন্ড বা প্রায় ২৮ লাখ টাকা খরচ করে নিজের গ্রাম বাম্বালিতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় তৈরি করেছেন মানে। তিনি দুই হাজার গ্রামবাসীর সুবিধার জন্য পোস্ট অফিস নির্মাণও শুরু করেন। প্রাক্তন সাউদাম্পটন তারকা যোগ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। গ্রামে একটি পেট্রোল পাম্প উদ্বোধন করতেও দেখা গেছে তাকে। এছাড়া গ্রামে ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধার ব্যবস্থাও করেছেন।
এখানেই শেষ নয়, মানে তার গ্রামের প্রতিটি পরিবারকে ৭০ মার্কিন ডলার প্রায় ৬ হাজার ৩০০ টাকা মাসিক সহায়তা প্যাকেজের ব্যবস্থাও করেছেন। তিনি ওই গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীদের ৪০০ মার্কিন ডলার ৩৬ হাজার টাকার বেশি উপহারও দেন। এছাড়া আফ্রিকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতেও ভূমিকা রেখেছেন।
আফ্রিকার দেশ মালাউইয়ের শত শত এতিম শিশুদের উপহার হিসেবে তিনি তার লিভারপুলের জার্সি পাঠিয়েছেন। ২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের আগে, মানে উপহার হিসেবে দক্ষিণ সেনেগালের বাম্বালিতে তার গ্রামের বাড়িতে ৩০০টি লিভারপুলের জার্সি পাঠিয়েছিলেন। সেনেগালে তার নামে একটি ফুটবল স্টেডিয়ামও রয়েছে।
মানে একজন আপাদমস্তক ‘ডাউন টু আর্থ’ প্রকৃতির মানুষ। এর আগে লিভারপুলে এক স্থানীয় মসজিদের অযুখানা পরিস্কার করতে দেখা গেছে তাকে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ পাউন্ডের মতো বেতন (বছরে ১২ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি) পাওয়া সত্ত্বেও দামি ফোন, দামি গাড়ি এসব কিছুর প্রতিই তার মোহ নেই। তিনি নিজেই বলেছিলেন, দশটি ফেরারি গাড়ি, ২০টি দামি ঘড়ি আর বিলাসবহুল বাড়ি, এসব দিয়ে কী হবে!
বিলাসবহুল ঘরের বদলে গড়ে তুলেছি অসংখ্য স্কুল। দামী জামা কাপড় দিয়ে ওয়ারড্রব না সাজিয়ে অগণিত মানুষকে জামাকাপড় দিয়েছি। আমি নিজে দামি গাড়ি চালানোর বদলে অগণিত ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল বাসের ব্যবস্থা করেছি। দামি রেস্টুরেন্টে না খেয়ে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত শিশুর খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এই আমার শান্তি।