ইদানিং যেন পৃথিবীতে মহামারী কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগ বেশিই হচ্ছে। হাজার হাজার প্রান কেড়ে নিচ্ছে । ধবংস হচ্ছে মানুষের সাথে তাদের মালামাল, বাড়িঘর ও অর্থনীতি। শেষ হচ্ছে অনেক পরিবারের স্বপ্ন। হারাতে হচ্ছে প্রিয় স্বজনদের, যাদেরকে ছাড়া একটা দিন ও কাটান সম্ভব হতোনা। ফেরা যাক মূল প্রতিবেদনে,
আমি তোমার জন্য যেকোনো কিছু করবো, আমাকে এখান থেকে বের করে নাও’। বয়সে বড় বাচ্চাটা অনেকটা ফিসফিস করে বলছে, ‘আমি তোমার চাকর হয়ে থাকবো’। মেয়েটার এমন কথার জবাবে একজন উদ্ধারকর্মী বললেন, ‘না…না’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এমন একটি ভিডিও। সিরিয়ার হারেম শহরের কাছে ছোট এক গ্রাম বেসনায়া-বেসিনেহ। ওই গ্রামের দুই বোন তুরস্ক-সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছে। দুজনই বয়সে শিশু। বড় বোনটি ছোট বোনটিকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। উদ্ধারকর্মীদের উদ্দেশে এই নরক থেকে উদ্ধারের আর্ত আবেদন জানাচ্ছে মেয়েটি।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বড় বোনটির নাম মরিয়ম। ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট বোনটিকে সে আগলে রেখেছে। আলতো করে ছোটটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তারা পরস্পরের সঙ্গে চাপাচাপি করে কোনরকমে শুয়ে আছে। হতে পারে তারা বিছানাতেই ছিল। আর সেখানেই চাপা পড়েছে।ছোট বাচ্চাটির নাম ইলাফ। তাদের বাবা জানায়, ইলাফ ইসলামিক নাম, যার অর্থ ‘সুরক্ষা’।
মুস্তাফা জুহির আল-সাঈদ ঘটনার বয়ান দেন। তিনি জানান, তার স্ত্রী এবং তিন সন্তান গত সোমবার ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার কয়েক ঘণ্টা আগেই শুয়ে পড়েছিলেন। বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারলাম মাটি কাঁপছে…আর পলেস্তারা আমাদের মাথায় পড়তে শুরু করেছে। আমরা দু’দিন ধরে এই ধ্বংসস্তুপের নিচেই আটকে ছিলাম। আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, আশা করি এই অনুভূতি কারও জীবনে না আসুক’।
আল-সাঈদ জানান, এভাবে চাপাপড়া অবস্থায় তিনি এবং তার পরিবার উচ্চস্বরে কোরআনের আয়াত পাঠ করছিলেন যেন কেউ না কেউ তাদের আওয়াজ শুনতে পান। ‘মানুষ আমাদের আওয়াজ শুনতে পারেন এবং আমাদের উদ্ধার করা হয়, আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের। খোদার প্রতি কৃতজ্ঞতা আমরা বেঁচে আছি এবং যারা আমাদের উদ্ধার করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা’, বলেন তিনি।
ইলাফ এবং মরিয়মকে ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে কম্বলে পেচিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলতে থাকে। ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার মতো তাপমাত্রায় যারা এমনকি ধ্বংসাবশেষ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন তাদের জন্যও টিকে থাকা কঠিন। আর সেখানে এখনও যারা উদ্ধার হননি তাদের জীবিত পাওয়ার আশা সময়ের সঙ্গে ফুরিয়ে আসছে।
ইদলিব প্রদেশে আল-সাঈদের বাড়ি। সিরিয়ার উত্তরাংশের এই অঞ্চলটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই ভূমিকম্পে সেখানে কমপক্ষে ১২০০ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এমনটাই জানিয়েছে সিরিয়ার বেসামরিক প্রতিরক্ষা। মানবাধিকার কর্মীদের এই দলটি ‘হোয়াইট হেলমেট’ নামে বেশি পরিচিত। এদিকে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। বুধবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা একটি বিশাল ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। উদ্ধারকারীরা আটকে থাকা জীবিতদের কাছে পৌঁছতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বলেছেন, তুরস্কে ছয় হাজার ৯৫৭ জন এবং সিরিয়ায় দুই হাজার ৫৪৭ জন মারা গেছেন।