মায়ের ছোট পেটে সন্তানের জায়গা থাকলেও সন্তানের বড় ফ্ল্যাটে মায়ের জায়গা নেই! গর্ভাবস্থার দশ মাস ১০ দিন যে মা কষ্টের তীব্রতা সহ্য করে সন্তান প্রসব করেন । বাবা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করেন না তা নয়! তিনি সারাজীবন সন্তানকে লালন-পালন করেন। কিন্তু সেই শিশুরা কি তাদের বাবা-মায়ের কথা মনে রাখে? অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কাছ থেকে বেশি কিছু চান না। শেষ বয়সে প্রিয় সন্তানের পাশে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার ইচ্ছা আছে।
আর এই ইচ্ছা নিয়েই প্রতিটি অভিভাবক দিন-রাতের ঘণ্টা গুনতে থাকেন। কিন্তু তাদের অনেকেই সেই শিশুর আশ্রয় না পেয়ে নিজ লোক ছাড়া বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিচ্ছেন। এমনকি বৃদ্ধাশ্রমে বড় ফ্ল্যাটের কোণে পর্যাপ্ত জায়গা নেই মানুষপ্রেমী মা-বাবার জন্য। তাদের পুরানো আবাসিক নরকে নিক্ষেপ করা হয়। তবুও প্রতিবাদ শিকড় ধরে না; মন অভিশাপ দেয় না।
আজকের প্রবীণরা তাদের সমস্ত সময় এবং সম্পদ তাদের সন্তানদের জন্য বিনিয়োগ করেছেন, নিজের জন্য কিছুই রাখেনি। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তারা সন্তানের কাছ থেকে এর সামান্য অংশও পায় না। অনেক সময় দেখা যায় সন্তান নিজের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য হিমশিম খাচ্ছে, তাই বাবা-মাকে বোঝা মনে হয়।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু ভালো থাকার জন্য বাবা-মা তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রাখেন। আবার দেখা যায়, সন্তানের টাকার অভাব হয় না, কিন্তু বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন বোধ করে না, বা বোঝা মনে করে। নয়তো নিজেকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়। , বা অবহেলাহীন দুর্ব্যবহার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে যে তাদের বাবা-মা নিজেই সাধু পরিবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। তবে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি নয়।
একবার বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারলেই যেন সব দায়মুক্তি। এভাবে নানা অজুহাতে অভিভাবকদের দূরে রাখা হচ্ছে। অনেক খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, কর্মচারী যাদের একসময় অত্যন্ত বর্ণিল জীবন ছিল, তারা নিজ সন্তানদের অবহেলা ও বঞ্চনার কারণে বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা হতে বাধ্য হচ্ছেন।
অনেক শিশু বা আত্মীয়রা তাদের কাছ থেকে আর শুনতে পায় না। তাদের সাথে দেখা করবেন না, এমনকি তাদের টাকা বা জিনিস পাঠাবেন না। এমনকি বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান বা ঈদের আনন্দের সময়ও বাবা-মাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় না।
এমনও শোনা যায়, মৃত্যুর পরও অনেকে বাবা-মাকে শেষবারের মতো দেখতে যান না। বৃদ্ধাশ্রমই অবহেলিত প্রবীণদের শেষ আশ্রয়স্থল। এই বৃদ্ধাশ্রমে তাদের আজীবন অবদানের স্বীকৃতি, সম্মান ও শেষ দিনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এখানে তারা তাদের অবশিষ্ট দিনগুলি নির্জনে, সম্মানের সাথে, আনন্দে কাটাতে পারে। প্রয়োজনে অনেক বৃদ্ধাশ্রমে ভালো চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। কিন্তু সব অর্জনের পরও এখানে যেটা পাওয়া যায় না সেটা হল নিজের পরিবারের ঘনিষ্ঠতা।